বন্ধুর সাথে সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে, তাই না? কী করি আমরা বন্ধুদের সাথে? সব বন্ধু কি একরকম প্রিয়া কেউ একটু বেশি প্রিয়, তার সাথে আমরা মনের কথা বলি। কখনও খুশির কিছু ঘটলে কখন তা বন্ধুকে বলব, মন ছুটে যায়। আবার কোনো ঘটনায় আঘাত পেলে, কারও ওপর রাগ হলে আর কাউকে বলতে না পারলেও তাকে বলি।
এই অধ্যায়ে আমরা নতুন একজনের বন্ধু হওয়ার জন্য কিছু কাজ করব, যাতে আমি তার একজন "প্রিয় বন্ধু' হতে পারি। প্রথমে এমন একজনকে বেছে নেব যার সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে। কীভাবে আমরা বন্ধু হলাম, বন্ধুত্বের জন্য কী করেছিলাম, সেগুলো খুঁজে বের করব। এরপর আমরা সবাই মিলে সবার কাছ থেকে আমাদের বন্ধু হওয়ার গল্প শুনব। তারপর প্রিয় বন্ধু হওয়ার জন্য কী কী করা দরকার, সেসব জেনে আমরা নতুন একজনের "প্রিয় বন্ধু' হব।
প্রিয় বন্ধু হওয়ার গন্তব্যে পৌঁছাতে আমরা ছয়টি ধাপ পার হব। শেষ ধাপে গিয়ে নতুন একজনের প্রিয় বন্ধু হব। এরপর নতুন বন্ধুকে নিয়ে এই পথটি সুন্দরভাবে পাড়ি দেওয়ার আনন্দ উদ্যাপন করব।
আমার বন্ধুর গল্প
এবার আমরা নিজেদের বন্ধুর গল্প বলব। তার কোন দিকগুলো আমার ভালো লাগে, কেন আমি তাকে বন্ধু মনে করলাম, সেই গল্পটি বলব। তবে গল্পটি বলব ছবিতে ছবিতে। নিচে আমার গল্পের ছবিটি আঁকি।
|
আমার বন্ধু কেন আমার প্রিয়?
আমরা আমাদের বন্ধুর গল্প শুনলাম। গল্প শুনে বুঝতে পারলাম, আমরা সবাই যার যার বন্ধুকে অনেক ভালোবাসি। সবার কাছেই নিজের বন্ধুটি অনেক প্রিয়। বন্ধুটি কেন আমার এতো প্রিয়? সে কী কী করে বলে আমার প্রিয়া এসো আমরা একটু ভাবি। খুঁজে পেলে নিচের ছকে লিখি।
"আমার বন্ধু কেন আমার প্রিয়” | |
---|---|
কারণ | এতে আমার কেমন লাগে |
সে মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনে | শান্তি পাই, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় |
আমরা ভেবে বের করলাম আমার বন্ধু আমার কাছে কেন প্রিয়। এবার আমরা সহপাঠীদের কাছ থেকে শুনৰ "প্রিয় বন্ধু" তাদের কাছে কেন প্রিয়।
প্রিয় বন্ধু হওয়ার উপায়
আমরা প্রথমে নিজের বহু কী কী কারণে প্রিয়, তা বের করেছি। এরপর সহপাঠীদের কাছ থেকে তারা কী কী কারণে তাদের বন্ধুদের পছন্দ করে, তাও জানলাম। আমরা সবাই প্রিয় বন্ধু হওয়ার অনেকগুলো উপায় খুঁজে পেলাম।
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম বন্ধুত্ব তৈরি করতে যে আচরণগুলো সাহায্য করতে পারে সেগুলো হলো:
বন্ধুরা এ আচরণগুলো করলে আমাদের ভালো লাগে। আমাকে বুঝে তারা পাশে থাকে বলে আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। আমরা আনন্দ পাই। আমাদেরকে ভালোবাসে বলেই তারা আমাদের কষ্ট দিতে চায় না। তাদের অনুভূতি ও আচরণ দিয়ে আমরা উপকৃত হই। তাদের এই মনোভাবকে সহমর্মিতা বলে। সহমর্মী হলে একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়। সম্পর্কের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে। ফলে দ্বন্দ্ব ও ঝগড়া-বিবাদ কমে যায়।
আমরা সহমর্মিতা ও তার সুবিধা সম্পর্কে জানলাম। এবার আমার নিজের পাঁচটি সহমর্মী আচরণ অপর পৃষ্ঠার ছকে লিখি।
আমার সহমর্মী আচরণ |
---|
১। |
২। |
৩। |
৪। |
৫। |
সহমর্মিতার অভাবে আমরা অন্যদের অনুভূতি ও প্রয়োজন বুঝতে পারি না। অন্যের অনুভূতি, প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা না করেই কোনো কথা বলে ফেলি। কখনও দুষ্টুমি করে এমন কিছু করে ফেলি, যা তাদের মনে কষ্ট দেয়। ভাই-বোন, আত্মীয়, সহপাঠী, বন্ধুর সাথেও মাঝে মাঝে আমরা এমন আচরণ করে ফেলি। এ ধরনের আচরণে কষ্ট পেয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। সবার সাথে মিশতে পারে না। কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। এতে তাদের পক্ষে বন্ধুত্ব তৈরি করা, পড়াশোনা, এমনকি অন্যান্য কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়। কারও কারও মধ্যে বড় হলেও এই সমস্যা থেকে যায়। কখনো কখনো মা-বাবার অনুভূতি ও পরিস্থিতি না বুঝে এমন কিছু করে ফেলি যা তাদের মনে কষ্ট দেয়।
এবার আমরা অপর পৃষ্ঠার ছবিটি মনোযোগ দিয়ে দেখি। সময় নিয়ে চিন্তা করি ছবিগুলো দেখে আমার কী মনে হচ্ছে?
প্রথম নিজে ভাবলাম, তারপর সহপাঠীদের সাথে ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। কোন কোন পরিস্থিতিতে কী কী ভাবে বন্ধু হওয়া যায়, তার ধারণা পেলাম।
ছবির সাথে আমার কী কোনো মিল আছে? আমি কী এমন কোনো কাজ করি? ছবিগুলো দেখে এমন কোনো কাজের কথা মনে হচ্ছে, যা আমি এখন থেকে করতে চাই। আমার উত্তরগুলো দিয়ে নিচের ছকটি পুরণ করি।
আমি যে সহমর্মী আচরণগুলো করি | আমি এখন থেকে যে সহমর্মী আচরণগুলো করতে চাই |
---|---|
|
কে কে আমার বন্ধু হতে পারে?
কখনও কখনও আমরা পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ছবিতে প্রদর্শিত আচরণগুলো পাই। আবার আমরা নিজেরাও করি। পরিবারের মধ্যেও কারও কারও সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। কারও সাথে হয়তো গভীর বন্ধুত্ব হয়। আবার কারও সাথে কিছুটা কম।
পরিবারের কাকে কাকে আমি বন্ধু মনে করি, আমি কী তা খুঁজে দেখতে চাই? খুব মজা হয়, না? তাহলে যখন মন চাইবে পরিবারের বন্ধুর সাথেই মনের কথা বলতে পারব। আনন্দ শেয়ার করতে পারব। দুঃখ-কষ্টও চাইলে শেয়ার করতে পারব।
এবার আমরা পরিবারের মধ্য থেকে এমন ৩ জনকে খুঁজে বের করি, যাদের সাথে আমি সহমর্মী আচরণ করি। তাদের প্রত্যেকের সাথে আমি কী কী সহমর্মী আচরণ করি নিচের ছকে তা দাগ টেনে দেখাই। যদি একই আচরণ একাধিকজনের সাথে করি, তবে তাদের প্রত্যেকের সাথেই দাগ টেনে দেখাব।
ওপরের ছকের কাজটির মাধ্যমে আমরা পরিবারে আমাদের বন্ধু পেয়ে গেলাম। ঐ তিনজনের মধ্যে কার সাথে কেমন বন্ধুত্ব তার একটা ছবি দেখতে পাচ্ছি। যার সাথে ঐ আচরণগুলোর দাগের সংখ্যা বেশি তার সাথে আমাদের বন্ধুত্ব তত গভীর। পরিবারের মধ্যে যে তিনজন বন্ধু খুঁজে পেয়েছি তাদের সাথে কী বন্ধুত্ব আরও বাড়াতে চাই? তাদের সাথে এখন যে আচরণগুলো করছি না তার মধ্যে থেকে কিছু আচরণ যোগ করে বন্ধুত্ব বাড়াতে পারি।
আমরা বন্ধুদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাই। তারা আমাদের পাশে থাকে। আমরা তাদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হই। আমাদের চারপাশের প্রকৃতি থেকেও আমরা অনেকভাবে উপকৃত হই। মানুষ ছাড়াও আলো-বাতাস, পানি, গাছপালা, পশু-পাখি এসব প্রকৃতির উপাদান। গাছপালা, পশু-পাখি কি আমাদের বন্ধু? এবার আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখি।
বৃক্ষদল বলেছে কেন তারা নিজেদেরকে আমাদের বন্ধু দাবি করে। প্রাণিদল বলেছে কেন তারা নিজেদেরকে আমাদের বন্ধু দাবি করে। আমরা বুঝলাম ওরা কেন আমাদের বন্ধু। আমরা কী ওদের বন্ধু দাবি করতে পারি? আমরা কী করি আমাদের এই বন্ধুদের জন্য?
এবার দেখে নিই আমরা কী কী করি গাছপালা, পশু-পাখির জন্য। এদের জন্য আমরা যে আচরণগুলো করি এবং যেগুলো করতে চাই সেগুলো অপর পৃষ্ঠার বক্সে লিখি। তাহলে আমরা দেখতে পাব কোন কোন সহমর্মী আচরণের জন্য আমরা নিজেদেরকে তাদের বন্ধু দাবি করতে পারি।
আমরা এই প্রকৃতিতে বাস করি, তার প্রত্যেকটি উপাদান আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আলো, বাতাস, মাটি, পানি, উদ্ভিদ, প্রাণী প্রভৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। এরা আমাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে। আমরা এদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও কৃতজ্ঞ থাকব। এদের ধন্যবাদ জানাব। এদের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করব না।
আমি কার প্রিয় বন্ধু হব?
আমরা কয়েক দিন ধরে বন্ধুত্ব তৈরি করার জন্য পথ চলছি। এক এক করে তিনটি ধাপ পার হলাম। আমার বন্ধু কেন প্রিয় তা বের করে প্রথম ধাপ পার হলাম। বন্ধুত্ব মানে কী, তা জেনে দ্বিতীয় ধাপ পার হলাম। কে কে বন্ধু হতে পারে তা বুঝে তৃতীয় ধাপ পার হলাম।
বন্ধু হওয়ার শেষ ধাপে পৌঁছানোর জন্য এখন থেকে আমরা আরও মনোযোগী হব। আর মাত্র তিনটি ধাপ পার হলেই ছুঁয়ে ফেলব আমার বন্ধু হওয়ার গন্তব্য। হয়ে যাব নতুন একজনের প্রিয় বন্ধু। আমরা সবাই তৈরি তো? তাহলে শুরু করা যাক।
এবার পথ চলা শুরু হলো চতুর্থ ধাপের উদ্দেশ্যে। আমি যার প্রিয় বন্ধু হতে চাই, তাকে খুঁজে বের করব। এমন একজনকে বেছে নেব যার সাথে আমার এখন বন্ধুত্ব নেই। যখন বন্ধু হয়ে যাব তখন আমরা শ্রেণির সবাই মিলে আমাদের নতুন বন্ধুদের নিয়ে একটি উৎসব করব। আমরা তাদের সেই উৎসবে আমন্ত্রণ জানাব। সবাই সবার নতুন বন্ধুর সাথে পরিচিত হব। উৎসব উদযাপন করার জন্য আমরা সবাই পরিকল্পনা করব ও অংশগ্রহণ করব।
প্রিয় বন্ধু হতে কী করব?
প্রিয় বন্ধু হওয়ার জন্য ধাপ অনুযায়ী আমার কাজের একটি পরিকল্পনা তৈরি করব। এই পরিকল্পনাটি তৈরি করতে এবার আমরা আর একবার দেখে নেই কী কী কাজ করলে আমি প্রিয় বন্ধু হতে পারব।
"প্রিয় বন্ধু হতে সহমর্মী আচরণ |
---|
|
আমি যে সহপাঠীর প্রিয় বন্ধু হতে চাই ফাঁকা ঘরটিতে তার ছবি আঁকি। ছবির পাশে সংক্ষেপে তার পরিচয় ও আমি কেন তার প্রিয় বন্ধু হতে চাই তা লিখি। তবে তার আগে সে আমার প্রিয় বন্ধু হতে চায় কি না জেনে নেই। সে রাজি না হলে এমন কাউকে বেছে নেই যে আমার বন্ধু হতে চায়।
বন্ধুর ছবি ও পরিচয় | আমি কেন তার প্রিয় বন্ধু হতে চাই |
---|---|
|
আমি কার প্রিয় বন্ধু হব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেন তারই বন্ধু হব তাও বের করেছি। এবার আমার পরিকল্পনা করার পালা। কী কী কাজ করব বন্ধুত্বের জন্য প্রথমে তা নিচের প্রথম বক্সে লিখব। তারপর যখন বন্ধু হয়ে যাব তখন ২ নম্বর বক্সে বন্ধুকে নিয়ে বন্ধুমেলায় কী করব তা পরিকল্পনা করব। সবশেষে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করতে কী করতে চাই তা ৩ নম্বর বক্সে লিখব।
আমার প্রির বন্ধু বানানোর পরিকল্পনা | ||
---|---|---|
১. কী কী কাজ করব বন্ধুত্বের জন্য | ২. বন্ধু মেলায় কি করব | ৩. বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে কি করব |
প্রিয় বন্ধু হলাম
আমরা এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্ধু হওয়ার কাজ করব। এক মাস পরে আমরা 'বন্ধুমেলা' উৎসব করব। উৎসবের দিনে আমার প্রিয় বন্ধুকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
আজ …………………………………………………তারিখ থেকে শুরু হলো আমার পরিকল্পনার কাজ।
……………………………………. তারিখ। কী আনন্দ!! আমি পৌঁছে গেলাম শেষ বালে। অবশেষে আমি বন্ধু হলাম "প্রিয় বন্ধু'
বন্ধুত্বে সহমর্মীতার চর্চা
এই অধ্যায়ের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে সহমর্মিতামূলক আচরণ ও বন্ধুত্বে সেগুলো চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি। এখন চর্চা করার পালা। এই বছরের বাকি সময় জুড়ে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করব। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বা চর্চাগুলো ব্যক্তিগত ডায়েরি বা জার্নালে লিপিবদ্ধ করব। নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেব। পাশাপাশি শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় পর পর আমাদের সাথে শ্রেণিতে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। এভাবে চর্চা এবং মতবিনিময় বছরজুড়ে চলবে।
ডায়েরি বা জার্নালে লিপিবদ্ধ করব প্রতিফলন লেখার সময় নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লিখব।
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
অপর পৃষ্ঠার ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে আমি ধারণা লাভ করব। আমি নিজে আমাকে উৎসাহ দেব এবং কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। আমার অভিভাবক ও শিক্ষকও আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি। এবং কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। উৎসাহ দেবেন। কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। শিখন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলোর মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে স্টার তারকা চিহ্ন) দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।
খুব ভালো ★ ★ ★ ভালো ★★ আরও ভালো করার সুযোগ আছে -
আরও দেখুন...